বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৭ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
আজ রোববার আখেরি মোনজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৫৬তম বিশ^ ইজতেমার প্রথম পর্ব। মোনাজাত পরিচালনা করবেন বিশ^ তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা জুবায়ের হোসেন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রথম পর্বের তিন দিনব্যাপী বিশ^ ইজতেমায় শরীক হতে আসা লাখ লাখ মুসল্লী ইজতেমা ময়দানের প্যান্ডেলে স্থান না পেয়ে আশপাশের রাস্তাঘাট, কল-কারখানা, মার্কেটের সামনে খোলা আকাশের নিচে হোগলা ও চাদর বিছিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। গতকালই গোটা টঙ্গী এলাকা যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আগত লাখ লাখ মুসল্লির পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে সমগ্র এলাকা। টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছিল ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ভিড়।
প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতকে ঘিরে মানুষের টঙ্গীমুখি স্রোত গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো। আখেরি মোনাজাতের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত এই জনস্্েরাত আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। কনকনে শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করেও কারো মুখে নেই কোন অভিযোগ। শুক্রবার থেকে ইজতেমা শুরুর কথা থাকলেও হাজার হাজার মসুল্লী দুইদিন আগেই ইজতেমা ময়দানে পৌঁছে যাওয়ায় গত বুধবার থেকেই প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শেষে চলছে বিভিন্ন ভাষায় বয়ান। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা আলেমরা বিভিন্ন বিষয়ে বয়ান করছেন। সমবেত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ মনযোগ সহকারে ঈমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ের বয়ান শোনেন।
আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে ইজতেমা আয়োজক সূত্রে জানা যায়। এর আগে হবে হেদায়েতি বয়ান। মানাজাতে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হবে। প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে এযাবৎকালের সর্বাধিক মুসল্লি অংশ নিবেন বলে আয়োজকদের ধারণা। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার কল-কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
যারা বয়ান করছেন :
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশিদুল হক। সকাল ১০টায় বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইবরাহিম দেওলা, মাদরাসা ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশিদ, আরব জামাতের জন্য বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আহমদ লাট, বোবা ও বধিরদের জন্য বয়ান করেন ভারতের মাওলানা সানোয়ার, বিদেশি জামাতের মুসল্লিদের জন্য ইংরেজিতে বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা ইফতার জামান। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ফারুক। বাদ আসর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা যুহাইরুল হাসান এবং অনুবাদ করেন মাওলানা যোবায়ের। ইজতেমায় মূল বয়ান উর্দুতে হলেও অংশ নেওয়া বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসল্লিদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়।
আখেরি মোনাজাত ঘিরে বন্ধ থাকবে যেসব সড়ক :
রোববার ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত হওয়ার কথা রয়েছে। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষ্যে গাজীপুর ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে বলে গতকাল শনিবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। শনিবার রাত ১২টা থেকে টঙ্গী-কামারপাড়া রোড, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুরের ভোগরা বাইপাস পর্যন্ত এবং আবদুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়াও ময়মনসিংহ ও গাজীপুরগামী যানবাহনগুলোকে গাবতলী দিয়ে কোনাবাড়ি হয়ে এবং ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী যানবাহনগুলোকে ভোগরা বাইপাস দিয়ে তিনশ ফিট রাস্তা ব্যবহার করে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
ইজতেমা ময়দানে ৭ মুসল্লির মৃত্যু :
শুক্রবার রাত ও শনিবার সকাল নাগাদ ময়দানে আরো তিন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার মলমলিয়া গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে মুফাজ্জল হোসেন খান, চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানা সদরের আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক, নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার মাসিমপুর গ্রামের রহমতুল্লাহর ছেলে হাবিবুর রহমান হাবি।
এছাড়া গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত সিলেটের নুরুল হক, গাজীপুরের আবু তৈয়ব ওরফে আবু তালেব, খুলনা জেলার মোফাজ্জেল হোসেন খান ও ঢাকার মুন্সীগঞ্জের আক্কাস আলী সিকদার নামে আরো তিনজন মৃত্যুবরণ করেন। ইজতেমা ময়দানে জানাযা শেষে তাদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করায় জরিমানা :
ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৫টি অভিযান পরিচালনা করেছেন। এসব অভিযানে ১৪ মামলায় ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা ও আদায় করা হয়েছে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত শনিবার সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ইজতেমা মাঠের আশপাশে এসব অভিযান পরিচালনা করা হয়।
বিশেষ ট্রেন :
ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আখেরি মোনাজাতের দিন ময়মনসিংহ-টঙ্গী, ঢাকা-টঙ্গী ও টাঙ্গাইল-টঙ্গী রুটে ১৩টি অতিরিক্ত ট্রেন চলাচল করবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রাকিবুর রহমান।
বিশ্ব ইজতেমায় ফ্রি চিকিৎসাসেবা :
ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন মেডিক্যাল ক্যাম্প চালু করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দানের উত্তর পাশে মন্নু টেক্সটাইল মিলস-সংলগ্ন নির্ধারিত স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র এলাকায় এ চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন।
র্যাবের চিকিৎসা কেন্দ্র :
ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন এলাকায় চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেছে র্যাব। চিকিৎসা কেন্দ্রে মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। মুসল্লিদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাসহ গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য পোর্টেবল অক্সিজেন, নেবুলাইজেশন ও অন্যান্য চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও ইজতেমায় স্থাপিত মেডিক্যাল সেন্টারের মোবাইল নম্বরে (০১৭৭৭৭২০০৪৫) যোগাযোগ করা জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
চিকিৎসা সেবা স্বাস্থ্য বিভাগ :
ইজতেমায় আগত দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লিদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা, ওষুধপত্র সরবরাহে স্বাস্থ্য বিভাগের নেতৃত্বে অস্থায়ী ৬টি কেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনে জরুরি অ্যাম্বুলেন্সের বিশেষ ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। অস্থায়ী ৬টি কেন্দ হলো হোন্ডাগেট ১টি, বাটা গেট ১টি, মন্নুগেট ১টি, তুরাগ নদীর পশ্চিম তীরে ২টি এবং প্রতি বছরের ন্যায় বিদেশি মেহমানদের জন্য ১টিসহ মোট ৬টি অস্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ব ইজতেমা মাঠে নগদ কাবিনে ৬৪ বিয়ে :
নগদ কাবিন পরিশোধে বিশ্ব ইজতেমার টঙ্গী মাঠে ৬৪ বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার নগদ কাবিনের টাকা পরিশোধে মধ্য দিয়ে বর ও কনের নাম ঘোষণা করে এ বিয়েগুলো সম্পন্ন হয়। বয়ানের মিম্বর থেকে এ বিয়ে সম্পন্ন করান ভারতের মুরব্বিদের মরহুম জ্বুায়রুল হাছানের ছেলে মাওলানা জুহায়রুল হাছান। বিয়ে শেষে নব দম্পতিগুলোর জন্য দোয়া ও মাঠে খেজুর বিতরণ করা হয়।
ইজতেমার মাঠ আলেমি শুরার নারায়ণগঞ্জ তাবলিগ কর্মী জালাল মিয়া জানান, এখানে নগদ কাবিনের শর্তেই বর-কনের মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হয়। মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়ের অভিভাবক মেয়ের এজিন (অনুমতি) নিয়ে মাঠে হাজির থাকেন। মাঠে বিয়ের শর্ত বরকে পুরো কাবিনের টাকা কনে পক্ষকে পরিশোধ করতে হয়।